spot_img
Homeচট্টগ্রাম মহানগররেলপথে বাড়ছে দুর্ঘটনা, পুরনো স্লিপারই বড় ঝুঁকি

রেলপথে বাড়ছে দুর্ঘটনা, পুরনো স্লিপারই বড় ঝুঁকি

ভ্রমণের সবচেয়ে নিরাপদ মাধ্যম রেলপথে বাড়ছে দুর্ঘটনা। গত এক মাসে নাশকতা, রেললাইন কাটা ও স্লিপার ভাঙাসহ বিভিন্ন কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। এরমধ্যে ১৫ নভেম্বর থেকে ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত রেল পূর্বাঞ্চলসহ বিভিন্ন জায়গায় ঘটেছে ১০টিরও বেশি দুর্ঘটনা। এতে চট্টগ্রামের ট্রেনযাত্রীদের মধ্যে দেখা দিয়েছে শঙ্কা।

রেল সংশ্লিষ্টদের মতে, রেললাইনে ত্রুটি, পুরাতন রেললাইন, অবৈধ পকেট গেট, ঝুঁকিপূর্ণ রেল ক্রসিং, রেললাইনের বিভিন্ন স্থানে ক্লিপ না থাকাসহ নানান কারণে বাড়ছে এই ধরনের দুর্ঘটনা। আর ট্রেনে নিরাপত্তার অভাবে নাশকতার সুযোগ পাচ্ছে দুর্বৃত্তরা।

এদিকে ট্রেনে বেশ কয়েকটি নাশকতার পরও যাত্রীদের নিরাপত্তায় তেমন কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি। এর মধ্যে চট্টগ্রামে রেলওয়ে গভর্নমেন্ট পুলিশের (জিআরপি) ৫৩ জন দায়িত্ব পালন করেন যাত্রী নিরাপত্তায়। আগে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী (আরএনবি) দায়িত্ব পালন করলেও এখন তাদের ট্রেনের দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাখা হয়েছে। অথচ চট্টগ্রাম বিভাগে আরএনবির ১ হাজার ১৩৩ জন সদস্য রয়েছেন।

রেলওয়ে সূত্রে জানা গেছে, চট্টগ্রাম থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে ১২ জোড়া আন্তঃনগর ট্রেন এবং ৮ জোড়া মেইল ট্রেন প্রতিদিন চলাচল করে।

আরও জানা গেছে, বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) রেল পূর্বাঞ্চলের গাজীপুরের শ্রীপুর উপজেলার বনখড়িয়া এলাকায় রেললাইন কেটে রাখায় একটি ট্রেনের ইঞ্জিনসহ ৭টি বগি লাইনচ্যুত হয়। এতে একজন নিহত এবং অন্তত ১০ জন আহত হন। ঘটনার ২৬ ঘণ্টা পর ট্রেন চলাচল স্বাভাবিক হয়।

৭ ডিসেম্বর রাজধানীর তেজগাঁও এলাকায় ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ক্রেনের আঘাতে তিতাস কমিউটার ট্রেনের ইঞ্জিনসহ একটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

গত ১৯ নভেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় মালবাহী কন্টেইনার ট্রেনের একটি বগির চারটি চাকা লাইনচ্যুত হয়। ২২ নভেম্বর কমলাপুর রিলিজ ক্রেন লাইনচ্যুত হয়, একইদিন আখউড়া থেকে সিলেটের উদ্দেশে ছেড়ে আসা তেলবাহী ট্রেন হবিগঞ্জের শায়েস্তাগঞ্জ উপজেলার রশীদপুর সেকশনের লস্করপুর পৌঁছলে দুটি বগি লাইনচ্যুত হয়।

পশ্চিমাঞ্চলে গত ২০ নভেম্বর রংপুর থেকে ছেড়ে আসা ঢাকাগামী রংপুর এক্সপ্রেস ট্রেন টাঙ্গাইলে লাইনচ্যুত হয়। ২৫ নভেম্বর কিশোরগঞ্জের গচিহাটা রেলওয়ে স্টেশনে অল্পের জন্য দুটি ট্রেন মুখোমুখি সংঘর্ষ থেকে রক্ষা পায়। এ ঘটনায় একটি ট্রেনের বগি লাইনচ্যুত হয়।

এদিকে ১৬ নভেম্বর টাঙ্গাইলে খালি রেকে আগুন দেয় দুর্বৃত্তরা। ১৯ নভেম্বর সরিষাবাড়িতে যমুনা এক্সপ্রেস ট্রেনে ও ২২ নভেম্বর সিলেট স্টেশনে থাকা উপবন এক্সপ্রেসেও একই কায়দায় আগুন দেওয়া হয়।

এছাড়া চলতি বছরের এপ্রিলে ১২টি, মে মাসে ৭টি, জুনে ৬টি, জুলাইয়ে ৬টি, আগস্টে ১৪টি ও সেপ্টেম্বরে ৭টি ট্রেন দুর্ঘটনা ঘটে।

চট্টগ্রাম রেলস্টেশনে ১১ ডিসেম্বর কথা হয় সোনার বাংলা ট্রেন যাত্রী বেসরকারি কলেজ অধ্যক্ষ নাজমুল নাহারের (৫০) সঙ্গে। তিনি বলেন, যাত্রী নিরাপত্তায় রেলওয়েকে আরও যত্নবান হতে হবে। আরও গুরুত্ব সহকারে দেখতে হবে বিষয়গুলো।

বাংলাদেশ যাত্রী কল্যাণ সমিতির মহাসচিব মোজাম্মেল চৌধুরী বলেন, যাত্রী নিরাপত্তায় উন্নত বিশ্বের মতো ট্রেনে সিসি ক্যামেরা বসানো হয়, নিয়মিত রেললাইন পর্যবেক্ষণ, মেরামত ও মনিটরিং জোরদার করা দরকার।

জিআরপি থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শহিদুল ইসলাম বলেন, ‘যাত্রী নিরাপত্তায় এই পুলিশ সংখ্যা যথেষ্ট নয়। লোকবল বাড়াতে চিঠি দিলেও এখনও বরাদ্দ হয়নি।

রেলওয়ের (পূর্ব) অতিরিক্ত চিফ অপারেটিং সুপারিনটেন্ডেন্ট জাকির হোসেন বলেন, শীতে সাধারণত কুয়াশার কারণে ট্রেন দুর্ঘটনা বেশি হয়। কিন্তু অনেক সময় গেটম্যানের অসতর্কতা, দুর্বৃত্তের নাশকতার কারণেও রেললাইনের ক্ষতি হচ্ছে।

রেলওয়ের (পূর্ব) মহাব্যবস্থাপক নাজমুল ইসলাম বলেন, কুয়াশা, অবৈধ পকেট গেটের কারণে দুর্ঘটনার শিকার হয় ট্রেন। এছাড়া লাইন অনেক সময় দুর্বল হলেও ট্রেন লাইনচ্যুত হয়।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments