spot_img
Homeবাংলাদেশ‘আমি এমনিতেই মরে যাব, আমার বউ-বাচ্চাকে বাঁচান’

‘আমি এমনিতেই মরে যাব, আমার বউ-বাচ্চাকে বাঁচান’

ট্রেনের বগি জ্বলছে আগুনের লেলিহান শিখায়। সেই বগির এক জানালায় শরীরের অর্ধেকটা বের করতে পেরেছিলেন। পিঠের ওপর জানালা পড়ে যাওয়ায় আটকা পড়েন সেভাবেই। শরীরের অর্ধেক জানালার বাইরে, অর্ধেক ট্রেনের ভেতরে। আগুনের শিখায় জ্বলছিল তার শরীর। ওই অবস্থাতেও শরীরের সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে চিৎকার করে বলছিলেন, ‘আমাকে নয়, আমি এমনিতেই মারা যাব। আমার বউ-বাচ্চা পুড়ছে। ওদের বাঁচান প্লিজ…’

সত্যি সত্যিই বাঁচানো যায়নি অর্ধেক শরীর নিয়ে ট্রেনের জানালায় আটকে পড়া সেই ব্যক্তিকে। ফায়ার সার্ভিস যতক্ষণে আগুন নিয়ন্ত্রণে এনেছে, ততক্ষণে পুড়ে ছাই হয়েছেন সেই ব্যক্তি। শুক্রবার (৫ জানুয়ারি) রাতে ঢাকাগামী বেনাপোল এক্সপ্রেসে দুর্বৃত্তরা আগুন দিলে সেই আগুনেই পুড়ে অঙ্গার হয়েছেন সেই ব্যক্তি।

ঢাকার কমলাপুরের দিকে যেতে থাকা বেনাপোল এক্সপ্রেসে দুর্বৃত্তরা যখন আগুন দেয়, ট্রেনটি তখন রাজধানীর গোপীবাগ এলাকায়। আগুনে পুড়ে যায় ট্রেনের পাঁচটি বগি। ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ট্রেন থেকে দুই শিশুসহ চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। দগ্ধ ও আহত কয়েকজনকে ভর্তি করা হয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢাকা) হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আগুন লাগলে গোপীবাগ এলাকায় ট্রেনটি থেমে পড়ে। স্থানীয়রা যে যেভাবে পারেন, আগুন নেভানোর চেষ্টা করেন। ট্রেনটির বগিতে থাকা যাত্রীরাও দ্রুত নামার চেষ্টা করতে থাকেন। কিছুক্ষণের মধ্যেই ফায়ার সার্ভিসও আগুন নেভাতে কাজ শুরু করে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ট্রেনের চার যাত্রী আর প্রাণ নিয়ে বের হতে পারেননি। আগুন নেভানোর পর তাদের মরদেহ বের করে নেওয়া হয়েছে ঢামেকের মর্গে।

প্রত্যক্ষদর্শী রায়হান কবির বলেন, ট্রেনের জানালায় আটকে থাকা যে লোকটি দেখতে দেখতে পুড়ে গেল, তার স্ত্রী ও বাচ্চা ভেতরেই চিৎকার করছিল। বের হওয়ার কোনো পথ ছিল না। আগুনের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে কেউ ট্রেনের কাছেই ঘেঁষতেই পারছিলাম না। জানালায় আটকে থাকা ওই ব্যক্তি বারবারই চিৎকার করে বলছিলেন, তার স্ত্রী-সন্তান ট্রেনে আটকা পড়েছেন। তাদের যেন বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়।

ট্রেন আটকে পড়ার পর স্থানীয়রাই এগিয়ে গিয়ে আগুন নেভানো ও উদ্ধারকাজ শুরু করেন। তাদের কয়েকজন জানান, ট্রেনের জানালার কাঁচ ওই ব্যক্তির শরীরের ওপর আটকে যাওয়ার কারণেই তাকে উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তার যথাসম্ভব জানালার কাঁচটি তুলে লোকটিকে উদ্ধারের চেষ্টা করেছেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা সফল হননি।

বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে আগুনের এই ঘটনায় আসিফ মোহাম্মদ খান (৩০) নামে একজন দগ্ধ হয়েছেন। তাকে শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়েছে। তার পরিবার বলছে, বেনাপোল এক্সপ্রেস ট্রেনে থাকা আসিফের স্ত্রী নাতাশা জেসমিন (২৫) আগুনে পুরে মারা গেছেন।

আসিফের বাবা সিদ্দিকুর খান বলেন, ঢাকার গেন্ডারিয়া শরৎগুপ্ত রোডে তাদের স্থানীয় বাড়ি। আসিফ ভাঙ্গা থেকে তার স্ত্রীকে নিয়ে ঢাকায় ফেরার পথে ট্রেনে আগুনের ঘটনায় তার স্ত্রী মারা যায় এবং সে দগ্ধ হয়ে বর্তমানে চিকিৎসাধীন।

বার্ন ইনস্টিটিউটের কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, আসিফের শরীরের ৮ শতাংশ পুড়ে গেছে। জরুরি বিভাগে তার চিকিৎসা চলছে। আগুনে অসুস্থ আরও তিনজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।

ফায়ার সার্ভিসের পরিচালক (অপারেশন ও মেইনটেন্যান্স) লেফটেন্যান্ট কর্নেল মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, ট্রেনে আগুনের ঘটনায় চারজনের মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার তৎপরতা চলমান রয়েছে। এ ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে।

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

- Advertisment -spot_img

Most Popular

Recent Comments